আজ ভোরে বিড়ালটির গলার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙল। দেখি আমার বিছানার পাশে এসে ম্যাঁও ম্যাঁও করছে, গা ঘেষাঘেষি করছে। একদম নাছোড় বান্দার মত! ওর এমন অদ্ভুত আচরণে আমার সন্দেহ হলো। একটু চিন্তিত হলাম। মনে করলাম, হয়তো ওর খিদে পেয়েছে। তাই বিছানা থেকে উঠে ওকে খাবার দিলাম কিন্তু খাবারের প্রতি ওর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, অন্যদিকে হাঁটতে শুরু করলো। এরপর ভাবলাম, ওর হয়তো পানির তেষ্টা পেয়েছে। তাই পানি দিলাম কিন্তু পানিতেও ওর মন ভরলো না। ও আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো। সে দৃষ্টিতে লুকিয়ে রয়েছে একরাশ দুঃখবেদনা। ওর এই করুণ দৃষ্টিতে আমার মন বিগলিত হয়ে গেলো, অনেক কষ্ট হলো। ভাবলাম আমি যদি নবী সোলাইমানের (আ.) মত হতাম, পশুপাখিদের ভাষা জানতাম! তাহলে ওর প্রয়োজনটা বুঝতে সক্ষম হতাম, ওর কষ্ট লাঘব করতে পারতাম! আমার শয়নকক্ষের দরজাটি ছিলো বন্ধ। এক সময় খেয়াল করলাম বিড়ালটি দীর্ঘ সময় ধরে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে এগোতে দেখেই আমার কাছে চলে আসলো। তখন ওর ব্যথা অনুধাবন করতে পারলাম। ও চাইছে আমি দরজাটি খুলে দিই। তাই আর দেরি না করে আমার শয়নকক্ষের দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই নীল আকাশে ওর দৃষ্টি পড়লো। মুক্ত আকাশের পানে এক পলক তাকাতেই ওর অবস্থার পরিবর্তন হলো। নিমেষেই দুঃখবেদনা ভুলে গেলো এবং আনন্দে আত্মহারা হয়ে আপন পথে ছুটে চললো। এরপর আমি বিছানায় ফিরে আসলাম। হাতে মাথা রেখে বিড়ালটির এই অদ্ভুত আচরণ নিয়ে খানিকটা ভাবলাম। হায় এ কথা যদি আগে জানতাম যে, একটি বিড়ালও স্বাধীনতার মর্ম অনুধাবন করতে সক্ষম! স্বাধীনতা হরণ হলে ব্যথিত হয়। আবার সে স্বাধীনতা ফিরে পেলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। সত্যি আশ্চর্যের! প্রকৃত অর্থেই ও স্বাধীনতাকে বুঝতে সক্ষম! ওর দুঃখ, কান্না, খাবার এবং পানির প্রতি অনিহা ছিলো শুধুই স্বাধীনতার জন্য। সেই স্বাধীনতা ফিরে পেতেই বার বার আমাকে অনুরোধ করেছে, আমার করুণ ভিক্ষে করেছে। নাছোড় বান্দার মত বার বার আমার পায়ে পড়েছে। | Entry #25666 — Discuss 0 — Variant: Bangladeshibangben
|